মোঃ মাহমুদুন্নবী আতিক, স্টাফ রিপোর্টারঃ
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া গ্রামে গত ১লা ফেব্রুয়ারিতে জমি নিয়ে মারামারি হয়ে একজন নিহত হয়। সেইদিন সকাল আনুমানিক ১০ ঘটিকার সময় মোঃ রহিমুদ্দিনের ছেলে নিহত জাফর আলী তার নিজ জমিতে সার দিচ্ছিলেন, এমতাবস্থায় তিনি পাশের জমিতে প্রায় সেখান থেকে ১৫০ গজ দূরে একটু জোর গলায় চিৎকার আওয়াজ শুনতে পান। তিনি আরেকজনের মাধ্যমে তৎক্ষনাৎ জানতে পারেন সেখানে তার জেঠাতো তিন ভাইয়েরা যথাক্রমে মাহাবুর রহমান (৩৮), বাবলু মিয়া (৪২) ও সয়ফুর রহমান (৫২) এদের পিতা মৃত আফাজ উদ্দিন এবং তাদের সাথে তিন ছেলে যথাক্রমে আশিক মিয়া (২৩), মাসুদ রানা (২৪) ও সালাম মিয়া (৩০) এর সাথে তাদের স্ত্রীগন এবং একজন বোনও অবস্থান করছে। আগে-থেকেই তারা জমিতে লাঠি, কোদাল, ধারালো দা’সহ দেশিও অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে যান, নিহত জাফর আলী সেটা জানতেন না। যেই জমিতে তারা এগুলো নিয়ে গেছেন সেই জমিটা হত্যাকৃত ব্যক্তির বাবার ছিলো, কিন্তু সয়ফুর রহমান বাহিনী দীর্ঘদিন থেকে অন্যায়ভাবে খেয়ে আসছিলো। পরবর্তীতে জাফর আলীর ভাইয়েরা বোঝার পর দেখলেন, তারা এই জমিগুলো অন্যায় ভাবে দখল করে খেয়ে আসছেন। তারপর স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সর্বশেষ কুড়িগ্রাম ও রংপুর থেকে উকিল নিয়ে এসে এর সমাধান করা হয়। সমাধানে হত্যাকৃত ব্যাক্তি জাফর আলীর বাবাকে সেই জমি দিয়ে দেওয়া হয়। কারন তাদের কাগজপত্র সঠিক ছিলো। এভাবে ২ বছর অতিবাহিত হয় কিন্তু মাঝে মাঝে একটু ঝগড়াঝাটি হয়ে আসছিলো এবং এর মধ্যে তাদের সাথে যোগ দেয় তৃতীয় পক্ষ, তারা তাদেরকে বিভিন্ন কথাবার্তার মাধ্যমে আরও হিংসাত্মক ও নৃশংসতার দিকে নিয়ে যেতে থাকে।
এরই জের ধরে, সেদিন মারামারি করার উদ্দেশ্যে জমিতে যায়। যখন জাফর আলী দেখলো সেখানে আরেক জেঠাতো ভাইয়ের ২ ছেলে তারাও বাবা হারা, তারা দুজন জমিতে গিয়ে একটু বাধা প্রদান করে। তখন হত্যাকৃত ব্যক্তি জাফর আলী, এই বাবা হারা দুইজন ভাতিজার দিকে তাকিয়ে সরল মনে মধ্যস্থতা করে দেওয়ার জন্য সেখানে যান। গিয়ে তার জেডাঠো ভাইদের হাত দিয়ে পিছন দিকে ঠেলে দেন আবার ভাতিজাদেরকেও পিছন দিকে ঠেলে দেন, যাতে তারা শান্ত হোন এবং মারামারি না করেন। এর মধ্যেই জাফর আলীর জেঠাতো ভাই ও বোন, তাদের ছেলেদের নিয়ে প্রথমে ভাতিজাদের মাথায় দা দিয়ে আঘাত করে, কিন্তু আঘাত মাথায় না লেগে কাধে লেগে যায় এবং তারা মাটিতে পরে যায়। এমতাবস্থায় জাফর আলী তাদের দিকে তাকাতেই আবার তাদের মধ্যে মাহবুব নামের সেই নরপশু নৃশংস ও নির্দয়ভাবে জাফর আলীর মাথার ঠিক মাঝ বরাবর তালুতে সজোরে দা দিয়ে আঘাত করে, তৎক্ষণাৎ তিনি জমিতে পড়ে গেলে তারা ৩ ভাই, ১ বোন ও তাদের ছেলেরা মিলে তার দুই হাটুতে কোদাল দিয়ে আঘাত করে এবং কোদালের ডাড়ি দিয়ে পায়ে আঘাত করে। আহত করে সন্ত্রাসীরা তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
আহত ব্যক্তিকে গ্রামবাসী কয়েকজনের সহায়তায় প্রথমে নাগেশ্বরী উপজেলা কেন্দ্রে নিয়ে যান, ডাক্তার দেখে দ্রুত রিপোর্ট করে রংপুরে নিয়ে যাইতে বলেন।
রংপুরে ডাক্তাররা দেখে তাকে অপারেশনের কথা বলেন, কেননা সিটি স্কান রিপোর্টে দেখা যায় তার মাথার একটা হাড় ভেঙে নিচে চলে গেছে এবং সেদিন থেকে ওনার বাকশক্তি ও স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। গত ১০ই ফেব্রুয়ারি জাফর আলী প্রচন্ড জ্বর এসে বিকেল ৪.৩০ মিনিটের দিকে ইন্তেকাল করেন, ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
তথ্যমতে তিনি এই জমিজামার সাথে একটুও জড়িত ছিল না, সবার সাথেই তিনি হাসি-মুখে কথা বলতেন এমনকি জীবনে এই জমিজামা নিয়ে কথাও বলেননি। ওনার হয়তো একটাই অপরাধ ছিলো যে, উনি তার বাবার অংশীদার ছিল।
তাদের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎকার নিতে গেলে হত্যাকৃত ব্যক্তি জাফর আলীর ছেলে মাওলানা আব্দুল্লাহ আল-আমিন বলেন, এরকমভাবে বাবাকে হারিয়ে আমরা সবাই বাকরুদ্ধ ও শোকাহত! যা কখনো কল্পনাও করতে পারি নাই। আমরা এই নৃশংস খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও ফাঁসি চাই। আমার দাদারা ৫ ভাই তাদের মধ্যে ৪ জনের পরিবারের সাথে আমার দাদার মিল মহব্বত ছিলো, কিন্তু এই একজন ভাই ও ভাইদের ছেলে মেয়ে ও পরিবার সবাই বেয়াদব। তারা এর আগেও আমাদের পরিবারে দাদা-চাচাদের উপর আক্রমণ চালিয়েছিল।
তাই সরকার কর্তৃপক্ষের নিকট আকুল আবেদন আমার বাবার হত্যাকারিদের সঠিক বিচার চাই।
Leave a Reply