বেরোবি প্রতিনিধি
আল আমিন
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর (বেরোবি) শিক্ষার্থীদের অন্যতম দাবি দ্রুতসময়ে মূল ফটক নির্মাণ করা। প্রায় পাঁচ মাস আগে টেন্ডার ছাড়াই মূল ফটক নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়। এত দিন পার হয়ে গেলেও মূল ফটকের কাজ শুরু না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে গত প্রতিষ্ঠিা বার্ষিকীর পর থেকে।
এদিকে চলতি বছরের নভেম্বর মাসে কাজ শুরু হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত ১২ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এই ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. হাসিবুর রশীদ। কিন্তু নভেম্বর মাস শুরু হলেও এ সংক্রান্ত কোন কার্যক্রম চোখে না পড়ায় ভিসির এই ঘোষণাকেও আইওয়াশ বলছেন শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, পূর্ববর্তী ভিসি প্রফেসর কলিমুল্লাহর আমল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক নির্মাণের দাবি তোলেন শিক্ষার্থীরা। এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের শেষ দিকে সাদামাটা ভাবে একটি ফটক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এমন সাদামাটা ফটক নির্মাণের বিরোধিতা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা শুরু করলে সেই উদ্যোগ থেকে সরে এসে আধুনিক গেট নির্মাণের জন্য আগ্রহীদের কাছে নকশা আহ্বান করে।
এর প্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগ্রহী প্রকৌশলীরা নকশা পাঠালে এ সংক্রান্ত গঠিত টেকনিক্যাল কমিটি যাচাই-বাছাই শেষে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ সাদ সিদ্দিক এর প্রণীত নকশা চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়। এর উপর ভিত্তি করে কলিমুল্লাহ প্রশাসন ২০২১-২০২২ ও ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে ৫০ লাখ করে এক কোটি টাকা বরাদ্দের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ২০২১ সালের জুন মাসে ভিসি কলিমুল্লাহ বিদায় নিলে গেট নির্মাণের উদ্যোগ স্থিমিত হয়ে পড়ে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে গত ৩ জুলাই ২০২২ তারিখে কলিমুল্লাহ প্রশাসনের নির্ধারণ করা গেট এর ছবি দিয়ে বিলবোর্ড বানিয়ে ঘটা করে নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন ভিসি। এর কয়েক দিনের মধ্যে সেখানে পাথর ফেলা হলে সবাই বিষয়টিকে সাধুবাদ জানায়। কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যে ওই পাথর ওখান থেকে সরানো হয়, এর পর দীর্ঘদিন ধরে শুধু ফলকের উদ্বোধন ছাড়া আর কোন কার্যক্রম চোখে না পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরে খোজ নিয়ে জানা যায় এখন পর্যন্ত গেট নির্মাণসংক্রান্ত কাজের কোন দরপত্রই (টেন্ডার) অাহ্বান করা হয় নি।
তবে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরেও অর্থনৈতিক কোড ৩২৫৮১০৮ এর অনুকূলে আবারো ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে এই খাতে। সময়মত কাজ শুরু না হলে এই টাকাও ফেরত যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি প্রফেসর ড. হাসিবুর রসিদ বলেন, গেট নির্মাণ কাজের প্রসেসিং চলছে। আশা করি এ মাসের ভিতর কাজ শুরু হয়ে যাবে
।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মামুন শাকিল বলেন, “আমরা তো মনে করেছিলাম ভিসি স্যারের উদ্বোধনের মাধ্যমে গেটের কাজ শুরু হয়ে গেল। এখন শুনছি এর টেন্ডারই দেয়া হয় নি। এটি আসলে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের প্রহসন ছাড়া কিছু নয়। তবে আবার যেহেতু ভিসি স্যার ঘোষণা দিয়েছেন নভেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু হবে সেটা হলেও ভালো হয়। “
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা জাতীয় ছাত্র সমাজের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মুশফিকুর রহমান বলেন, “টেন্ডার না দিয়েই গেট নির্মাণ কাজের উদ্বোধন প্রশাসনের একটা নতুন শিক্ষার্থীদের সান্ত্বনা দেয়ার প্রচেষ্টা মাত্র যা বিগত সময় ধরে হয়ে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক শিক্ষার্থীদের বহুদিনের প্রত্যাশা। এই মাসে কাজ শুরু হওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়তো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং ভিসি স্যারের আরও একটা চালাকি। টেন্ডার দিয়ে কাজ শুরু করতেও ২/৩ মাস সময় লেগে যাবে, তাহলে তিনি নভেম্বরের মধ্যে কীভাবে কাজ শুরু করবেন সেটা মাথায় আসে না।”
Leave a Reply