ডেস্ক রিপোর্টার
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ
চলতি কাতার বিশ্বকাপের প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ব্রাজিল ও ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে নির্ধারিত সময়ে দুই দলের কেউই গোলের দেখা পায়নি। এরপর অতিরিক্ত সময়ে নেইমারের দুর্দান্ত এক গোলে এগিয়ে যায় ব্রাজিল। কিন্তু সেই লিড বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি সেলেসাওরা। ক্রোয়েট ফরোয়ার্ড ব্রুনো পেটকোভিকের দুর্দান্ত এক শটে বল জড়িয়ে যায় ব্রাজিলের জালে। ফলে ১-১ গোলের সমতায় ম্যাচ শেষ হওয়ায় টাইব্রেকারে গড়ায় ম্যাচ।
ডমিনিক লিভাকোভিচ! গোলপোস্টের সামনে মাথা ঠান্ডা রেখে এতটা দুর্দান্ত পারফর্ম করতে শেষ কবে কোন গোলরক্ষককে করেছে তা বলা মুশকিল। তার একক বীরত্বে সেকেন্ড রাউন্ডের লড়াইয়ে জাপানকে হারায় ক্রোয়েশিয়া। আজ কোয়াটার ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষেও পুরো ম্যাচে নেইমার রিচালিসনদের শট একের পর এক দারুণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে গেলেন এই ক্রোয়েট গোলরক্ষক। এরপর টাইব্রেকারেও ঠেকিয়ে দিলেন রদ্রিগোর শট। তার অনবদ্য নৈপুণ্যে টাইব্রেকারে ব্রাজিলকে ৪-২ ব্যবধান স্তব্ধ করে দিয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছে গেছে গত বিশ্বকাপের রানার্স আপ ক্রোয়েশিয়া।
কাতারের এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে হাই ভোল্টেজ বেঁচে শুরুটা ভালোই হয়েছিল ব্রাজিলের।প্রথম ১৫ মিনিট নেইমার-রিচার্লিসনরা বলের ওপর আধিপত্য ধরে রেখে ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণভাগে চাপ সৃষ্টি করে।১৯ তম মিনিটে বা প্রান্ত দিয়ে বা পায়ের দারুণ কারুকাজ দেখিয়ে বক্সে ঢুকে ভিনিয়াস জুনিয়রের নেওয়া শট ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণভাগে বাধা পেয়ে ফিরে আসে।পরের মিনিটে নেইমারের নেওয়া শট অনায়াসে হাতে জমান শেষ ষোলো ম্যাচের ক্রোয়েশিয়ার হিরো গোলরক্ষক লিভাকোভিচ।
শুরুতে কিছুটা ব্যাকফুটে থাকলেও ধীরে ধীরে মদ্রিচ-পেরিসিচরাও খুলে ফেলতে শুরু করে। পরে কিছু সময় বলের উপর কিছুটা আধিপত্য হারানো ব্রাজিল তেমন কোন উল্লেখযোগ্য আক্রমণ তৈরি করতে পারেনি। ৪০ তম মিনিটে ডি বক্সের বাইরে সুবিধাজনক স্থানে ফ্রি-কিক পেয়েছিল ব্রাজিল। তবে সেখান থেকে নেইমারের নেওয়ার শট ঠেকাতে খুব বেশি কষ্ট হয়নি লিভাকোভিচের।
বিরতির পরও এই ক্রোয়েশিয়ান গোলরক্ষক বিরুদ্ধে বারবার হতাশ হতে হয় সেলেসাওদের ৬৫ তম মিনিট রদ্রিগোর ডি বক্সে বাড়ানো থ্রু বলে খুব কাছ থেকে পাকেতার নেওয়া হাফ ভলি শট এগিয়ে এসে দারুণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেন লিভাকোভিচ।
এ আক্রমণের পর গোলের জন্য মরিয়া হয়ে খেলার গতি বাড়ায় ব্রাজিল।৭৪ তম মিনিটে রিচার্লিসনের দেওয়া বক্সে বাড়িয়ে বলে নেইমার এগিয়ে গোলরক্ষককে একা পেয়ে গিয়েছিলেন।তবে লিভাকোভিচ বুদ্ধিদীপ্তভাবে নেইমারের শট নেওয়ার জায়গা কমিয়ে কর্নারের বিনিময়ে জাল অক্ষত রাখেন।
বল পজিশনে এগিয়ে থাকলেও পুরো ৯০ মিনিটে বলার মত কোন সুযোগ তৈরি করতে পারেনি গতবারের রানার্স আপ ক্রোয়েশিয়া।এ সময়টাতে ছয়টি শট নিলেও তার কোনটিই ব্রাজিলের গোল মুখে রাখতে পারেনি মদ্রিচ-পেরিসিচরা। নির্ধারিত সময়ে দুই দলই গোল করতে না পারায় খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
অতিরিক্ত সময়ও চলতে থাকে ব্রাজিলের আধিপত্য।৯৯ তম মিনিটে রিচার্লিসনের বক্সে দেওয়া নিখুঁত ক্রসে পাকেতা পা লাগাতে পারলেই গোল পেত ব্রাজিল। এর মিনিট পাঁচেক পর দারুণ এক গোলে সমর্থকদের মধ্যে স্বস্তি ফেরান দলের সবচেয়ে বড় তারকা নেইমার।ডি বক্সের বাইরে থেকে এই পিএসজি তারকা পাকেতাকে পাস দিয়ে দ্রু ডি বক্সে ঢুকে পড়েন।পাকেতার ফিরতি পাসে বল পেয়ে ডিফেন্ডার ও ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষককে দারুণ ড্রিবলিং এ কাটিয়ে কোনাকুনি শট নিয়ে জালে জড়ান বল।
যেখানে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের পেনাল্টি শুটআউটে ৪-২ ব্যবধানে পরাজিত করে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিলো ইউরোপিয়ান দেশ ক্রোয়েশিয়া। ক্রোয়েশিয়ার জালে ব্রাজিলের হয়ে টাইব্রেকারে শট মিস করেন রদ্রিগো এবং মার্কুইনহোস। এই হারে ২০০৬ বিশ্বকাপ থেকে টানা পঞ্চমবার নকআউটে এসে ইউরোপিয়ান দলের সামনে এসে থমকে দাঁড়াতে হলো ব্রাজিলকে।
Leave a Reply