স্থানীয় প্রতিনিধি
তোফায়েল আহমেদ
রংপুরের কৃষকদের গত বছরের তুলনায় এবছর বোরো ধান চাষে বাড়তি টাকা গুনতে হবে প্রায় ১৭২ কোটি টাকা। ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়ায় শুধু সেচেই খরচ বাড়বে ১৫ কোটি ২০ লাখ টাকা। এবং সার, কীটনাশক ও মজুরির দাম বাড়ায় প্রতি বিঘা জমিতে বোরো চাষ উৎপাদনে বাড়তি খরচ হবে (৪৫০০)চার হাজার পাচঁশত টাকা।
এছাড়া গত বছরের ষান্মাসিক সময়ে ডিজেলের দাম বৃদ্ধি আর এবছরের প্রথমদিকে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি। গত মৌসুমের চেয়ে চলতি মৌসুমে বোরো উৎপাদনে খরচ বাড়ছে কৃষকের।
রংপুর সদরের চন্দনপাঠ ইউনিয়নের লাহিড়ীহাটের কৃষক মোঃশাহাজান মাষ্টার বলেন, “এই সময় আমাদের বোরোর জমি তৈরিতে সময় কাটছে। কিন্তু বিদ্যুৎ ও ডিজেলের দাম বাতাসের মতো বাড়ায় এবার সেচ খরচে বাড়তি টাকা যোগান দিতে হবে। আর এতে করে বাড়বে উৎপাদন ব্যয়।
সেই সাথে ইউনিয়নের অন্যান্য কৃষকরা বলেন, “গত বছরের বোরো চাষে প্রতিবিঘা জমিতে সেচের খরচ ছিল ১২শ’ টাকা এবার ১৬শ’ টাকা। বীজ প্রতি কেজি ছিল ২শ’ টাকা এবার ৩৫০ টাকা। জমি তৈরিতে খরচ ছিল ৯শ’ টাকা থেকে ১৩শ’, সার খরচ ২ হাজার টাকা থেকে ৩৫শ’, কীটনাশক ৬শ’ টাকা থেকে ১ হাজার, ধান রোপণ ১ হাজার টাকা থেকে ১৫শ’, ধান কাটাই ৩ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা। সাথে যুক্ত হবে জমির ভাড়া ৬ হাজার টাকা। সেই হিসাবে গত বোরো মৌসুমে এক বিঘা জমিতে বোরো উৎপাদনের খরচ ছিল ১৪ হাজার ৯শ’ টাকা।
কিন্তু এবছর তা দাঁড়াবে ২০ হাজার ৪৫০ টাকায়। অর্থাৎ বিঘায় খরচ বাড়ছে ৫ হাজার ৫৫০ টাকা। রংপুর অঞ্চলে বিদ্যুৎ চালিত গভীর সেচ পাম্প ৬২ হাজার ৭৫৩টি, অগভীর পাম্প ২ লাখ ৪৯ হাজার ৭৭৪, ডিজেল চালিত গভীর পাম্প ৩৩২টি, অগভীর পাম্প ১৭ হাজার ৭১৮টি। বোরো ধান সেচ নির্ভর হওয়ায় উৎপাদন খরচের একটি বড় অংশ ব্যয় হয় সেচে।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, রংপুর অঞ্চলে বিদ্যুৎ চালিত গভীর-অগভীর সেচ পাম্পের সংখ্যা ৩ লাখ ১২ হাজার ৫২৭টি এবং ডিজেল চালিত সেচ পাম্পের সংখ্যা ১ লাখ ৭৩ হাজার ৩০টি। শুধু সেচেই কৃষকের ব্যয় বাড়বে প্রায় ১৬ কোটি টাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, “চলতি বোরো মৌসুমে রংপুর অঞ্চলে বোরে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৭ হাজার হেক্টর জমিতে। এখন পর্যন্ত রোপণ হয়েছে সড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে।”
তিনি আরো জানান, “বোরো চাষে অতিরিক্ত সেচ লাগে। সেচ দিতে যেন পানির অপচয় না হয় সেজন্য আমরা কৃষকদের লক্ষ্য রাখতে বলেছি। সেই সাথে আমাদের যে সুষম সারের ব্যবহারে উৎপাদন যাতে বৃদ্ধি পায় তার জন্যও কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। খরচ কমাতে কৃষকদের পরিমিত সেচ এবং নিয়ম মেনে সার ও কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।”
জাতীয় কৃষক সমিতি রংপুরের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানি জানান, “কৃষি ক্ষেত্রে প্রান্তিক, বর্গা আর গরিব কৃষকরা প্রধান। তাদের হাতে কিন্তু টাকা-পয়সা নেই। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের উচিত সরাসরি মাঠে গিয়ে তাদের একটি তালিকা করে বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করা। তারা যেন সেই প্রণোদনা পান, তা নিশ্চিত করা। এটা সম্ভব হলে রংপুরের কৃষি উৎপাদনের ধারা সচল রাখা সম্ভব হবে।”
Leave a Reply