স্থানীয় প্রতিনিধি
তোফায়েল আহমেদ
রংপুর সদর উপজেলার লাহিড়ীরহাট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ স্মৃতি স্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন, রংপুরের মাননীয় বিভাগীয় কমিশনার মোঃ সাবিরুল ইসলাম ও জেলা প্রশাসক ডঃ চিত্র লেখা নাজনীন।
১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে বিশ্বের বুকে জন্ম লাভ করে স্বাধীন বাংলাদেশ। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণায় উদ্দীপ্ত হয়ে সে সময় দেশের অনান্য এলাকার মানুষের মতো রংপুরের মুক্তিকামী মানুষও যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। শহীদ হন অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মমতার স্মারক হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের অসংখ্য বধ্যভূমি, গণকবর ও নির্যাতন কেন্দ্রগুলো। পরবর্তীতে এসব গণকবর বা বধ্যভূমিগুলো সরকারিভাবে সংস্কার ও সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পার করেও অনেক গণকবর এখনও অরক্ষিত অবস্থায় রয়ে গেছে। এছাড়া যেসব গণকবর-বধ্যভূমিকে স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়েছে সেসব বধ্যভূমির সঠিক ইতিহাস লিপিবদ্ধ বা সংরক্ষিত না থাকায় হারিয়ে যেতে বসেছে শহিদদের ইতিহাস।
সম্প্রতি রংপুরে একাত্তরের শহিদদের স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমি সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু তার যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও স্মৃতি সংরক্ষণ নেই। ফলে উত্তরবমজ্ঞের শহীদের স্মৃতি অনেকাংশেই বিলুপ্তির পথে।
রংপুর সদরের লাহিড়ীরহাট কেন্দ্রীয় বধ্যভূমি ভূমিদস্যুদের দখলে। নেই যাতায়াতের রাস্তা। নির্দিষ্ট দুই একটি দিন ছাড়া সারা বছরই বধ্যভূমিগুলোর কেউ কোনো খোঁজ খবর নেন না। দেখাশুনার লোক না থাকায় বধ্যভূমি দখল হয়ে যাচ্ছে । সন্ধার পরে প্রতিনিয়ত মাদক সেবন কারীদের আড্ডায় দখল হয়ে যায় লাহিড়ীরহাট বদ্ধভূমি।
রংপুর সদর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা বলরাম মহন্ত বলেন, “১৯৭১ সালে এ দেশকে পাকিস্তানি পাক হানাদারদের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য যুদ্ধ হয়েছিলো। সেই যুদ্ধের ইতিহাস পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার নানা উদ্যোগ সরকারসহ মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় নিয়েছে। কিন্ত সেই সময়ে শহিদ মুক্তিযোদ্ধাসহ গণহত্যার শিকার যারা হয়েছেন তাদের ইতিহাস সঠিক ভাবে সংরক্ষণ অনেকাংশে করা হয়নি।”
কিছুটা আক্ষেপ নিয়ে তিনি আরোও বলেন, “গণকবরগুলোর ইতিহাস এবং শায়িত মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মজীবনীও ঠিকমতো তুলো ধরা হয়নি। সরকারসহ সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে আমাদের চাওয়া ৭১’র বধ্যভূমিগুলোর সঠিক ইতিহাস নাম ফলক আকারে সংরক্ষণ করা হোক। আর এটি করা হলে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে বধ্যভূমিরগুলোর সঠিক ইতিহাস শ্রদ্ধার সঙ্গে রয়ে যাবে।”
রংপুর জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন বলেন, “রংপুরে আমি নতুন যোগদান করেছি। বধ্যভূমিগুলোর কি অবস্থা সেটি আমাকে দেখতে হবে এবং বিস্তারিত জানতে হবে। তবে বধ্যভূমিগুলো চিহ্নিত করে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ ও স্মৃতি ফলকের কাজ চলমান আছে। এছাড়াও বধ্যভূমির সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেখানে শায়িত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা সংরক্ষণ এবং তাদের আত্মজীবনী স্মৃতি হিসেবে রাখতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে কাজ চলমান রয়েছে।”
রংপুরের মাননীয় বিভাগীয় কমিশনার মোঃ সাবিরুল ইসলাম বলেন, “আপনারা ইতিমধ্যে এই সরকার আসার পরে মুক্তিযুদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রনালয় তৈরি করা হয়। কারন মুক্তিযোদ্ধের চিন্তা-চেতনা বাস্তবায়ন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ, বদ্ধভূমি সংরক্ষণ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের সম্মানি ভাতা থেকে শুরু করে অনেকগুলো কর্মসূচি নিয়েছে সরকার। সেই সাথে ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধাদের ‘বীর নিবাস ‘ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।”
উক্ত অনুষ্ঠানে আরোও উপস্থিত ছিলেন রংপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নুর-নাহার বেগম, সদর কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ সুশান্ত কুমার, স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ছায়াদত হোসেন বকুল, মুক্তিযোদ্ধা বলরাম সহ আরো অনেকে।
Leave a Reply