বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সদর উপজেলায় জামাতের সিরাতুন্নবী (সা.) অনুষ্ঠিত নতুন উপাচার্য পেল রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ রংপুর সদর উপজেলার সাংবাদিকদের নিয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। উলিপুরের হাতিয়ায় জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে সিরাতুন্নবী (সাঃ) উপলক্ষে বিশাল সাধারণ সভা রাধাকৃষ্ণপুর ডিগ্রী মহাবিদ্যালয়ের লেকচারার দেলোয়ার হোসেন মেয়াদউত্তীর্ণ কমিটির ভুয়া নিয়োগ নিয়ে দীর্ঘ ৯ বছর কলেজ পরিচালনা। ‘স্বৈরাচারী সরকার হেফাজতের ৩ শীর্ষ নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে’ গুলিবিদ্ধ শাহিনের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেন ছাত্রশিবিরের গাইবান্ধা জেলা শাখা কুড়িগ্রামে চার শহীদ পরিবারের মাঝে জামায়াতের ৮ লক্ষ টাকা বিতরণ। তানযীমুল উম্মাহ হিফয মাদরাসার বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বদরগন্জে ট্রাক্টরে পিষ্ট হয়ে শিশুর মৃত্যু

দু:স্থদের চাল ভুট্টার জমি থেকে লুট হয়ে দু:স্থদের কাছেই

  • প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন, ২০২৩

 

স্থানীয় প্রতিবেদক

তোফায়েল আহমেদ

রংপুরের সদর উপজেলার চন্দনপাঠ ইউনিয়ন পরিষদের পাশে একটি ভুট্টাখেতের ভিতর পড়ে ছিল খাদ্যগুদামের সীলমোহর যুক্ত ৬০-৭০ বস্তা চাল। গতমঙ্গলবার (১৩ই জুন) সন্ধ্যার আগে সেই চালের বস্তাগুলো এলাকার লোকজন দেখতে পেয়ে তা লুট করেন এলাকাবাসী।

ওই এলাকার লোকজন জানান, গতমঙ্গলবার ওই ইউনিয়ন পরিষদে তিন হাজার ৬৪জন অসহায়-দুস্থ মানুষের মাঝে বিনামূল্যে ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হয়। তাদের দাবি, চেয়ারম্যান মেম্বার কিছু গরীব কার্ডধারীকে বঞ্চিত করে বস্তাভর্তি চালগুলো বিক্রির উদ্দেশ্যে ওই ভুট্টাখেতে লুকিয়ে রাখছিলেন। ভুট্টাখেতে এলোমেলোভাবে পড়ে থাকা বস্তা ভর্তি চালের ছবি গতকাল বুধবার (১৪ই জুন) সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে রংপুর শহর জুড়ে শুরু হয় তোলপাড়।

বিষয়টি নজরে আসে জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীনের। তাঁর নির্দেশে বুধবার (১৪ জুন) দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর নাহার বেগম। ইউএনও’র সঙ্গে ছিলেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আব্দুল মতিন ও চাল বিতরণের দায়িত্বে থাকা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মাসুদ রানা।

উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘পবিত্র ইদুল আযহা উপলক্ষে ভিজিএফ হিসেবে ওই ইউনিয়নে ৩০ মেট্রিকটন ৬৪০ কেজি চাল বরাদ্দ পাওয়া যায়। গত মঙ্গলবার ওই ইউনিয়নে ৩ হাজার ৬৪ জন কার্ডধারীকে বিনামুল্যে চাল বিতরণ করা হয়। প্রত্যেক কার্ডধারীর জন্য ১০ কেজি করে চাল বরাদ্দ ছিল।’

চন্দনপাট এলাকাবাসী তৌহিদুল ও আব্দুস সালাম জানান, “ওই দিন বিকেলে এক ব্যক্তি ওই ইউনিয়নের পাশে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ভুট্টাখেতে যান। এ সময় দেখতে পান ভিজিএফের চালের বস্তাগুলো এলোমেলোভাবে পড়ে আছে। তিনি বের হয়ে এলাকার লোকজনকে জানালে এলাকার লোকজন ভুট্টাখেতের ভিতর থেকে চালের বস্তাগুলো লুট করেন। সেখানে ৩০ কেজি ওজনের আনুমানিক ৬০ থেকে ৭০ বস্তা চাল ছিল বলে জানা গেছে।”

ওই এলাকার অন্যান্যরা বলেন, “গরিব মানুষকে চাল না দিয়ে চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা অসৎ উদ্দেশ্যে ওই চালগুলো ভুট্টাখেতে রেখেছিলেন। হয়তো তারা রাতে চালগুলো পাচার করতেন। অনেক গরীব মানুষ ভিজিএফের চাল পাননি। ভিজিএফের তালিকাটি নিয়ে তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে চাল কেলেঙ্কারির ঘটনাটি।”

ঘটনার বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান দায় এড়িয়ে বলেন, “আমি হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে যাচ্ছি। কাগজে-কলমে চাল বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে ছিলাম ইউপি সদস্য তাজুল ইসলাম, ফরহাদ হোসেন ও রত্না পারভীনকে। যদি চাল বিতরণে কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে এর দায় তাদেরকেই নিতে হবে।”

পরবর্তীতে প্যানেল চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বলেন, “ওই দিন আমরা তিনজন মেম্বার দায়িত্বে  ছিলাম এবং সঠিকভাবে চাল বিতরণ করেছি। কেউ চাল নিয়ে ভুট্টাখেতে ফেলে দিলে তা দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়। বস্তা খুলে ১০ কেজি করে চাল দেওয়ার নিয়ম। কিন্তু সময়ের অভাবে তিনটি স্লীপ নিয়ে এক বস্তা করে চাল দিয়েছি।” ঠিক একই কথা বলেন অপর দুই ইউপি সদস্য রত্না পারভীন ও ফরহাদ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ইউনিয়নের একজন গ্রাম পুলিশ সদস্য বলেন, “চাল বিতরণে একজন ট্যাগ কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তিনি না আসা পর্যন্ত চাল বিতরণ করার কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু সেই নিয়মটিও মানা হয়নি। তিনি আসার আগেই চাল বিতরণের নামে চাল লুটপাট হয়েছে। এর দায় ইউনিয়ন পরিষদ ও তদারকি কর্মকর্তা এড়াতে পারেন না।”

পরবর্তীতে ট্যাগ কর্মকর্তা মাসুদ রানার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেখানে চাল বিতরণে অনেকটাই অনিয়ম হয়েছে। তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার চাল বিতরণ শুরু হয়েছে সকাল ১০টার দিকে। বৃষ্টির কারণে সময়মত সেখানে যেতে পারিনি। বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে গিয়ে দেখি  ১ হাজার ২১ বস্তা চালের মধ্যে বিতরণ হয়ে গেছে ৮৭১ বস্তা। আমি পরিষদে গিয়ে ১৫০ বস্তা চাল পেয়েছি । তা বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত বিতরণ করেছি। পরে বাসায় এসে শুনি ভুট্টাখেতে চালের বস্তা পড়েছিল।”

“আপনি প্রায় চার ঘন্টায় ১৫০ বস্তা চাল বিতরণ করলেন, আর আপনার আগে ইউপি সদস্যরা দেড় ঘন্টায় ৮৭১ বস্তা বিতরণ করেছেন, এটা কি সম্ভব?” এমন প্রশ্নের জবাবে মাসুদ রানা বলেন, যেহেতু ওই সময়ে ছিলাম না, তা বলতে পারবো না। তবে যেটা জেনেছি ভুট্টাখেতের চাল দুস্থরাই লুট করে নিয়ে গেছেন। এতে হয়তো কেউ একেবারেই বঞ্চিত হয়েছেন, আবার কেউ ১০ কেজির জায়গায় ৩০ কেজি পেয়েছেন। তবে দুস্থদের চাল দুস্থরাই পেয়েছেন।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুর নাহার বেগম বলেন, “ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।”

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন বলেন, “ওই ঘটনা জানতে পেরে ইউএনওকে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছি। যারাই চাল পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকুক না কেন, তারা কেউই ছাড় পাবে না।”

সংবাদটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সম্পর্কিত সংবাদ
© ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | রংপুর নিউজ ৩৬৫
ডিজাইন ও কারিগরী সহায়তায় আতিক