রিপোর্টার
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ
স্বামী-সন্তান সবই ঠিক-ঠাক আছে, প্রতিবেশিরাও জানেন তারা স্বামী-স্ত্রী। কিন্তু কাগজে-কলমে তারা হলেন ভাই-বোন। মুক্তিযোদ্ধার কোটা এবং সরকারি সুযোগ সুবিধা পেতে এমন উদ্ভট আর ব্যতিক্রম ঘটনাটি ঘটিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আনিছুর রহমান।
অভিনব প্রতারণার বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। ইতোপূর্বে নিজের ভাইকে ভোটার আইডি এবং শিক্ষা সনদ জালিয়াতি করে বাংলাদেশ রেলওয়েতে মুক্তিযোদ্ধার কোটায় চাকুরি নেবার ঘটনার তথ্য পাওয়া গেছে আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের কুটিনাওডাঙ্গা আমিরটারী তালবেরহাট গ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা আইনুল হক ও জমিলা বেগম দম্পতির বাড়ি। তাদের ৮ জন ছেলে-মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে আনিছুর রহমান। তিনি রংপুর বেতারে অফিস সহায়ক পদে কর্মরত আছেন। ২০০৭ সালে জেলার উলিপুর উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের নাগড়াকুরা গ্রামের বাসিন্দা মৃত: রবিউল ইসলাম ও মোছাঃ আছমা বেগমের মেয়ে সোনালী খাতুনকে বিয়ে করেন।
আনিছুর-সোনালীর ঘরে রয়েছে মোট তিন সন্তান। এরমধ্যে রয়েছে ১২বছরের বড় ছেলে এবং জমজ দু’সন্তান। বিয়ের পর সোনালী খাতুন তথ্য গোপন করে নিজের শ্বশুর-শাশুড়িকে পিতা-মাতা দেখিয়ে ২০১৪ সালে ভোটার হন।
এর আগে উপজেলার সাপখাওয়া দাখিল মাদ্রাসায় ২০১০-১১ সেশনে অনিয়মিত শিক্ষার্থী হিসাবে ভর্তি হন। সেখানে বীর মুক্তিযোদ্ধা দম্পতিকে অর্থাৎ নিজের শ্বশুর-শাশুড়িকে পিতা-মাতা দেখিয়ে রেজিস্ট্রেশন করেন। এই মাদ্রাসা থেকে সোনালী খাতুন ২০১৩ সালে জিপিএ-২.৯৪ পেয়ে দাখিল পাশ করেন। ভোটার হবার সময় সোনালী খাতুন তার দাখিল পরীক্ষার সনদ, জন্ম নিবন্ধন, শ্বশুর বাড়ির ঠিকানা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নিজের পিতা-মাতা এবং ২৫ই মে ১৯৯৪ সাল জন্ম তারিখ দেখিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করেন।
এই বিষয়ে প্রতিবেশি বলেন, ‘এনআইডিতে থাকা ছবি সোনালী খাতুনের। সে আনিছুর রহমানের স্ত্রী। তাদের ঘরে ৩টি সন্তান রয়েছে।’ প্রতিবেশি আরও বলেন, ‘নিজের বৌ কে কেন বোন বানিয়েছেন তা তো আমরা জানি না। এই বিষয়টি আগে জানতাম না। আজই প্রথম দেখলাম। অসৎ উদ্দেশ্য ছাড়া এমনটি কেউ করতে পারে না।’
সন্তোষপুর ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ জহুরুল হক বলেন, ‘আনিছুর রহমান আমার বাল্যকালের বন্ধু। সোনালী খাতুন আনিছুরের স্ত্রী। সে উলিপুর উপজেলায় বিয়ে করেছে। সোনালীর বাবার বাড়ি সেখানেই। ভোটার আইডিতে সোনালী খাতুনের পিতা-মাতার জায়গায় আনিছুরের পিতা-মাতার নাম ব্যবহার করেছে এ ঘটনা আমার জানা ছিল। কিন্তু বন্ধু হবার সুবাদে সে আমায় এ ব্যপারে কিছু না বলার জন্য অনুরোধ করে।
Leave a Reply