মিঠাপুকুর প্রতিনিধিঃ
রিপন শাহরিয়ার
রংপুরের মিঠাপুকুরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের স্ত্রীকেই হত্যার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (৩১ই মে) উপজেলার ১৩নং শাল্টি-গোপালপুর ইউনিয়নের বটেরচর শ্যামপুরে জমিজমা সংক্রান্ত মারামারির ঘটনায় আহত হন সাবেক ইউপি-সদস্য গোলজার হোসেন এবং তারই স্ত্রী মোছাঃ ফাতেমা বেগম (৪০)। পরে তাদের মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু বুধবার (৩১ই মে) ফাতেমা স্বামীসহ রাত অবধি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার কথা থাকলেও বৃহস্পতিবার (১লা জুন) সকালে নিজ বাড়ির মেঝেতে পড়েছিলো স্ত্রী ফাতেমার রক্তাত্ত মরদেহ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গোলজার হোসেনের বাড়ির সামনে ১৩ শতাংশ জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তার ভাতিজাদের সাথে বিরোধ চলছিল। এবং গত বুধবার (৩১ই মে) সকালে ওই জমিতে (আইল) সীমানা নির্ধারণ ও বাধা নিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যে হাতাহাতি ও মারপিটের ঘটনা ঘটে। এতে গোলজার ও তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম আহত হয়ে মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
স্বজনদের দাবি, বাড়িতে কেউ না থাকায় গোলজার হোসেন তার স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে কৌশলে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন এবং গোলজার হোসেন মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিন্তু সকালে তাদের বেয়াই মিন্টু মিয়া তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখেন তার বেয়াইন ফাতেমা বেগমের রক্তাত্ত মরদেহ মেঝেতে পড়ে আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, গোলজারের স্ত্রী সকালে মারামারির পর আহত অবস্হায় স্বামী স্ত্রী উভয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তার একমাত্র ছেলে আব্দুল্লাহ আল আমিন(১৫) মাদ্রাসায় থাকতেন এবং মেয়ে কেয়া আক্তার তামান্না (২১) ঢাকায় চাকরি করেন। তাদের আশেপাশে কোন বাড়িও নেই, সবগুলো ফসলি জমি। রাতের আঁধারে কখন ফাতেমা বেগম,হাসপাতাল থেকে বাড়িতে এসেছিলেন আর কিভাবে এই হত্যাকান্ড ঘটলো তাদের জানা নেই। তবে তাদের দাবি ভাতিজাদের ফাঁসাতে এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে গোলজার এবং এমনকি গভীর রাতে এলাকায় গোলজারকে দেখা গিয়েছিলো।
গোলজারের পাশের বাড়ির বাসিন্দা আলম মিয়া (৪১) বলেন, সকালে আমার স্ত্রী ধান সিদ্ধ করার জন্য আমার বোন রীনার বাড়িতে যায়। আমার বোনের বাড়ি গোলজারের বাড়ি থেকে আরও দুরে। আমি সেখানে যাওয়ার পথে গোলজারের শশুরবাড়ির লোকজন আমাকে পিছন থেকে ডাকতে থাকে। তখন আমি হত্যার বিষয়টা শুনতে পাই। তবে মৃতের ছেলে এবং বোনের দাবি, তাদের স্বামী স্ত্রীর মধুর সম্পর্ক ছিলো। জমি নিয়ে গন্ডগোলের কারনে এই হত্যাকান্ড!
স্থানীয় হান্নান মিয়া বলেন, গোলজারের সাথে ১৩ শতক জমি নিয়ে ভাতিজা মুজিব এবং বাতেনের সাথে বিরোধ চলছে। গত ২ মাস থেকে জমিজমাগুলো মাপামাপি হচ্ছিল। এরই মধ্যে গতকাল বুধবার ১০ টার দিকে উভয়পক্ষের মারপিটের ঘটনা ঘটে। হয়তোবা ভাতিজা ভাইদের ফাঁসাতে গিয়ে ফাতেমা হত্যাকান্ড। তবে পলাতক থাকায় মারামারি সংক্রান্ত প্রতিপক্ষের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান জানান, “হাসপাতাল থেকে গিয়ে স্ত্রীকে ঠান্ডা মাথায় খুন করে গোলজার হোসেন আবার হাসপাতালে ফিরে আসে। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত বিভিন্ন আলামত, লাশের সুরতহাল রিপোর্ট এবং বিভিন্ন তথ্য প্রমাণের উপর ভিত্তি করে গোলজার হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে তার স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে হত্যার কথা স্বীকার করে। এবং লাশ পোস্ট মর্টেমে পাঠানোর জন্য থানা হেফাজতে রয়েছে”।
Leave a Reply